ছুটিতে সিলেটের কোথায় ঘুরতে যাবেন

মেহেদী হাসান তালহা,বিশেষ প্রতিনিধিআপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয় কখনো সিলেট গিয়েছিলেন? উত্তর আসবে হ্যাঁ অথবা না। যদি হ্যাঁ বলে থাকেন তাহলে বলবো ঘুরতে নাকি অন্য কোন কাজে? আপনি যদি ভ্রমণ পিপাসু হয়ে থাকেন তাহলে আমিই আপনার সে উত্তর দিয়ে দিতে পারি, হ্যাঁ আপনি ঘুরতে গিয়েছিলেন, তবে ঠিকই পুণরায় প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়া যাবে, আপনি আসলে কয়টি জায়গা ঘুরে দেখতে পেরেছেন?

 

নিশ্চয়ই সবগুলো দেখতে পারেননি, আসলে পারা সম্ভবও না, কেননা পর্যটন শিল্পের এক অপার সম্ভাবনাময় স্থান হচ্ছে সিলেট। প্রতিবছরই নতুন নতুন পর্যটন কেন্দ্রের আবিষ্কার ঘটে, সম্প্রতি আবিষ্কৃত দুটি পর্যটন কেন্দ্র ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর ও জৈন্তাপুরের ডিবির হাওরের সৌন্দর্য্য ভ্রমণ পিপাসুদের আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে।

 

তাছাড়া দেশের একমাত্র মিঠাপানির জলাবন রাতারগুল, সচ্ছ এবং সুপেয় পানির জন্য জাফলং, নীল জলের জন্য সিলেটের নীল নদ খ্যাত রাতারগুল, নয়নাভিরাম ঝরণার কলকলানি শব্দ এবং পাহাড় বিলাসের জন্য জৈন্তা হিল রিসোর্ট (স্থানীয় নাম আলুবাগান), দেশের সবচেয়ে সুন্দর এবং স্বপ্নের গ্রাম পান্থুমাই, আবার মূল শহরে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ঐতিহ্য বহন করা কীন ব্রিজ, শাহজালাল (রঃ) এর মাজার।

 

এগুলো তো কেবল সিলেট জেলার কথা বললাম, যদি পুরো বিভাগের কথা আসে, তাহলে তো মনে হবে সিলেটই সম্ভবত পর্যটন কেন্দ্রগুলো একা দখল করে বসে আছে। তাই আর কথা না বাড়িয়ে আজ কথা বলবো সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রগুলো নিয়ে। আশাকরি লেখায় দেওয়া তথ্যগুলো ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য অনেক সহায়ক হবে।

 

১। রাতারগুলঃ

রাতারগুল বাংলাদেশের একমাত্র সোয়াম্প ফরেস্ট (Ratargul Swamp Forest)এটি সিলেট জেলা শহর থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরে গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত। রাতারগুল বনটি প্রায় ৩০,৩২৫ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। এই বিস্তৃর্ণ এলাকার ৫০৪ একর জায়গায় রয়েছে বন, আর বাকি জায়গা ছোট বড় জলাশয়ে পূর্ণ। তবে বর্ষায় পুরো এলাকাটিকেই দেখতে একই রকম মনে হয়।

 

রাতারগুল ‘সিলেটের সুন্দরবন’ নামে খ্যাত। এই রাতারগুল জলাবন বছরে চার থেকে পাঁচ মাস পানির নিচে তলিয়ে থাকা। তখন জলে ডুবে থাকা বনের গাছগুলো দেখতে সমগ্র বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পর্যটকরা এসে ভিড় জমায়। অনেক পর্যটক রাতারগুলকে বাংলাদেশের আমাজন বলেও ডাকেন।

 

বর্ষায় গাছের ডালে দেখা মিলে নানান প্রজাতির পাখি আবার তখন কিছু বন্যপ্রাণীও আশ্রয় নেয় গাছের ডালে। এছাড়াও শীতকালে এখানকার জলাশয়ে বসে হাজারো অতিথি পাখির মেলা। সাধারণত জুলাই থেকে অক্টোবর (বর্ষার শেষের দিকে) পর্যন্ত রাতারগুল ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ বন বিভাগ রাতারগুল বনের ৫০৪ একর জায়গাকে বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করে

রাতারগুল একটি প্রাকৃতিক বন, স্থানীয় বন বিভাগ এখানে হিজল, বরুণ, করচ সহ বেশ কিছু গাছ রোপণ করেন। এছাড়াও এখানে চোখে পড়ে কদম, জালিবেত, অর্জুনসহ প্রায় ২৫ প্রজাতির জলসহিষ্ণু গাছপালা

যেভাবে সিলেট যাবেন

ঢাকার গাবতলী এবং সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে সিলেটের বাস ছেড়ে যায়৷ ফকিরাপুল, সায়দাবাদ ও মহাখালী বাস স্টেশন থেকে গ্রীন লাইন, সৌদিয়া, এস আলম, শ্যামলি ও এনা পরিবহনের এসি বাস যাতায়াত করে, এগুলোর ভাড়া সাধারণত ৮০০ থেকে ১১০০ টাকার মধ্যে। এছাড়াও ঢাকা থেকে সিলেট যেতে শ্যামলী, হানিফ, ইউনিক, এনা পরিবহনের নন এসি বাস জনপ্রতি ৪০০ থেকে ৪৭০ টাকা ভাড়ায় পাবেন

 

ঢাকা থেকে ট্রেনে করে সিলেট যেতে কমলাপুর কিংবা বিমান বন্দর রেলওয়ে স্টেশান হতে উপবন, জয়ন্তিকা, পারাবত অথবা কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনকে বেছে নিতে পারেন আপনার ভ্রমণ সঙ্গী হিসাবে।

চট্টগ্রাম থেকেও ট্রেনে সিলেট যেতে পারবেন, পাহাড়িকা এবং উদয়ন এক্সপ্রেস নামের দুটি ট্রেন সপ্তাহে ৬ দিন চলাচল করে

ঢাকা থেকে সবচেয়ে দ্রুত সময়ে ও সাচ্ছন্দে যেতে আকাশ পথকে বেছে নিতে পারেন। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ, রিজেন্ট এয়ার, ইউনাইটেড এয়ার, নভো এয়ার এবং ইউএস বাংলা এয়ারের বিমান প্রতিদিন সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়

সিলেট থেকে রাতারগুল যাওয়ার উপায়

সিলেট থেকে দুই ভাবে রাতারগুল আসা যায়। সিলেট শহরের পাশের খাদিম চা বাগান ও খাদিমনগর জাতীয় উদ্যানের ভেতরের রাস্তা দিয়ে খুব অল্প সময়ে রাতারগুল পৌঁছানো যায়। এই পথে সিএনজি অটোরিকশা কিংবা জিপ নিয়ে শ্রীঙ্গি ব্রিজ যেতে হয়। 

 

সিলেট থেকে সকালে রাতারগুল গিয়ে বিকেলের মধ্যেই ফিরে আসা যায়। তাই সারাদিনের জন্য সিএনজি কিংবা অটোরিকশার ভাড়া ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা লাগবে। সারাদিন সিএনজি ভাড়া নিলে একই ভাড়ায় বিছনাকান্দিও ঘুরে আসতে পারবেন।

 

যদি সিলেটের আম্বরখানা থেকে লোকাল সিএনজি চড়ে যেতে চান তবে শ্রীঙ্গি ব্রিজ পর্যন্ত আসতে জনপ্রতি ১০০ টাকা ভাড়া। শ্রীঙ্গি ব্রিজ থেকে রাতারগুল জঙ্গলে ঢুকার জন্য জেলেদের ছোট ছোট নৌকা পাবেন। একটি ছোট নৌকায় ৪-৬ জন চড়া যায়। এমন একটি নৌকার ভাড়া ৮০০ থেকে ১৫০০ টাকা।

সিএনজি রিজার্ভ ও নৌকা ভাড়া করতে অবশ্যই দামাদামি করে নিন। রাতারগুলে লাইফ জ্যাকেট, ছাতা এবং মাঝির হ্যাট ভাড়া পাওয়া যায়

 

রাতারগুল যাওয়ার দ্বিতীয় পথটি হচ্ছে সিলেট হতে জাফলং গামী গাড়িতে গিয়ে সারিঘাট নামতে হবে। সিলেট থেকে সারিঘাট আসার ভাড়া নেবে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। সারিঘাট হতে বেবিটেক্সিতে করে গোয়াইনঘাট বাজারে এসে নৌকা দিয়ে রাতারগুল যেতে হবে। আর ১০-১২ জনের জন্য একটি নৌকার সারাদিনের ভাড়া লাগবে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা, তবে এপথে খরচ এবং সময় বেশি লাগে

 

এছাড়া সিলেটের বন্দর বাজার পয়েন্ট থেকে সিএনজি যোগে সাহেব বাজার হয়ে মটরঘাট পৌঁছে ডিঙ্গি নৌকা ভাড়া করে রাতারগুল জলাবনে চলে যেতে পারবেন

মনে রাখা জরুরী যে পথেই রাতারগুল আসেন না কেন, বনের ভেতরে ঢুকতে গেলে জেলেদের ছোট নৌকা লাগবে

কোথায় থাকবেন

লাল বাজার এলাকায় ও দরগা রোডে কম ভাড়ায় অনেক মানসম্মত রেস্ট হাউস আছে৷ যেখানে ৪০০ থেকে ১০০০ টাকায় বিভিন্ন ধরণের রুম পাবেন। এছাড়াও হোটেল হিল টাউন, গুলশান, দরগা গেইট, সুরমা,কায়কোবাদ ইত্যাদি হোটেলে আপনার প্রয়োজন ও সামর্থ অনুযায়ী থাকতে পারবেন

রাতারগুল ভ্রমণে সতর্কতা
বর্ষায় বন ডুবে যাওয়ার পর সাপ সাধারণত বিভিন্ন গাছের ডালে আশ্রয় নেয়, এই বিষয়ে সতর্ক থাকুন। এছাড়া এখানে জোঁকের উপদ্রবও আছে। যদি সাঁতার জানা না থাকে তবে লাইফ জ্যাকেট সাথে রাখুন। প্রয়োজনে ছাতা ও রেইনকোট নিয়ে নিন

 

২। বিছনাকান্দি

বিছনাকান্দি (Bisnakandi) সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তমপুর ইউনিয়নে অবস্থিত বিছনাকান্দি হচ্ছে একটি পাথর কোয়ারী এরকম আরেকটি পাথর কোয়ারী হল জাফলং

 

অবশ্য অনিয়ন্ত্রিত পাথর উত্তোলনের ফলে জাফলং এর সৌন্দর্য আজ নষ্টের পথে কিন্তু বিছানাকান্দি তার যৌবন ধরে রেখেছে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের খাসিয়া পাহাড়ের অনেকগুলো ধাপ দুই পাশ থেকে এসে এক বিন্দুতে মিলেছে আর পাহাড়ের খাঁজে রয়েছে ভারতে মেঘালয়ের সুউচ্চ ঝর্ণা

 

র্যটকদের কাছে বিছানাকান্দির মূল আকর্ষন হচ্ছে পাথরের উপর দিয়ে বয়ে চলা স্বচ্ছ জলধারা আর পাহাড়ে পাহাড়ে শুভ্র মেঘের উড়াউড়ি প্রথম দেখায় আপনার মনে হবে এ যেন এক পাথরের বিছানা, আর স্বচ্ছ পানিতে গা এলিয়ে দিতেই যে মানসিক প্রশান্তি পাবেন এই প্রশান্তি আপনাকে বিছানাকান্দি টেনে নিয়ে যাবে বারবার এ যেন পাহাড়, নদী, ঝর্ণা আর পাথর মিলিয়ে প্রাকৃতিক মায়াজাল বিছিয়ে রেখেছে বিছানাকান্দি

বিছনাকান্দি ভ্রমণের উপযুক্ত সময়

বিছনাকান্দি যে কোন সময় ভ্রমণের জন্যে উপযুক্ত তবে বর্ষাকাল বিছানাকান্দি ভ্রমণের জন্য আদর্শ সময় চারদিকে প্রচুর পানি প্রবাহ থাকার কারণে এ সময় বিছানাকান্দির প্রকৃত সৌন্দর্য্য দেখতে পাওয়া যায় বছরে অন্য সময় এখানে পাথর উত্তোলনের কারণে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সাময়িক অসুবিধার সৃষ্টি হয়

বিছনাকান্দি যাওয়ার উপায়

দেশের যেখানেই থাকেন আপনাকে প্রথমে সিলেট জেলা শহরে আসতে হবে বিছনাকান্দি যাবার জন্যে তারপর সিলেট থেকে বিছনাকান্দি যেতে হবে

ঢাকা থেকে সিলেট যাবার উপায়

ঢাকা থেকে বাসে বা ট্রেনে অথবা প্লেনে আপনি সিলেট যেতে পারবেন ফকিরাপুল, সায়দাবাদ ও মহাখালী বাস স্টেশন থেকে গ্রীন লাইন, শ্যামলি, সৌদিয়া, এস আলম ও এনা পরিবহনের এসি বাস যাতায়াত করে এসি বাসের ভারা সাধারণত ৮০০ থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে এছাড়াও ঢাকা থেকে সিলেট যেতে শ্যামলী, হানিফ, ইউনিক, এনা পরিবহনের নন এসি বাস জনপ্রতি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা ভাড়ায় পাবেন

 

ঢাকা থেকে ট্রেনে করে সিলেট যেতে কমলাপুর কিংবা বিমান বন্দর রেলওয়ে স্টেশন হতে উপবন, জয়ন্তিকা, পারাবত অথবা কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনকে বেছে নিতে পারেন আপনার ভ্রমণ সঙ্গী হিসাবে ট্রেনে যেতে সময় লাগবে সাড়ে ছয় থেকে সাত ঘন্টা

ঢাকা থেকে সবচেয়ে দ্রুত সময়ে ও সাচ্ছন্দে যেতে আকাশ পথকে বেছে নিতে পারেন শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ, রিজেন্ট এয়ার, ইউনাইটেড এয়ার, নভো এয়ার এবং ইউএস বাংলা এয়ারের বিমান প্রতিদিন সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় ঢাকা থেকে সিলেট যেতে শ্রেণিভেদে টিকেট মূল্য ১৫০০ থেকে ৭২০০ টাকা

সিলেট থেকে বিছনাকান্দি

বিছনাকান্দি যেতে সিলেটের আম্বরখানার সিএনজি স্টেশন থেকে জনপ্রতি ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায় লোকাল সিএনজিতে চড়ে হাদারপার নামক জায়গায় যেতে হবে সারাদিনের জন্য সিএনজি রিজার্ভ নিলে সাধারণত ভাড়া ১০০০-১৫০০ টাকার মত লাগবে হাদারপার এসে নৌকা ঘাট থেকে নৌকা ঠিক করে বিছনাকান্দি যেতে হবে

 

তবে অবশ্যই দামাদামি করে নৌকা ভাড়া ঠিক করে নিবেন বড় ট্রলার ভাড়া করতে কোন কোন ক্ষেত্রে ২৫০০ পর্যন্ত টাকা লাগতে পারে শীতকালে ও বর্ষার আগে নদীতে পানি কম থাকে সেই ক্ষেত্রে আপনি চাইলে হাদারপাড় থেকে হেটেও বিছনাকান্দি যেতে পারবেন শুকনো সময়ে মটরবাইক চলাচল করে, জনপ্রতি ৫০-৬০ টাকা ভাড়ায় যাওয়া যায়

বিছনাকান্দিতে শরীর ভেজালে পোষাক পরিবর্তনের প্রয়োজনে অর্থের বিনিময়ে ওয়াশরুম ব্যবহার করা যায়

কোথায় থাকবেন

বিছানাকান্দি যাওয়া আসার সময় কম লাগার কারণে থাকার জন্য সিলেট শহরকে বেছে নিতে পারেন হোটেল হিল টাউন, গুলশান, দরগা গেইট, সুরমা,কায়কোবাদ ইত্যাদি হোটেলে আপনার প্রয়োজন ও সামর্থ অনুযায়ী থাকতে পারবেন এছাড়া লালা বাজার এলাকায় ও দরগা রোডে কম ভাড়ায় অনেক মানসম্মত রেস্ট হাউস আছে৷ যেখানে ৪০০ থেকে ১০০০ টাকায় বিভিন্ন ধরণের রুম পাবেন

কি খাবেন

বিছনাকান্দিতে কিছু অস্থায়ী খাবারের হোটেল রয়েছে সেসব হোটেলে পেটচুক্তিতে একটি তরকারির সাথে আনলিমিটেড ভাত ডাল খেতে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা খরচ হবে এছাড়া সাথে কিছু শুকনো খাবার, পানি ইত্যাদি প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে নিয়ে যেতে পারেন

হাদারপার বাজারে গনি মিয়ার ভূনা খিচুড়ি খেতে পারেন এছাড়া সিলেট শহরে বিভিন্ন মানের রেস্টুরেন্ট আছে, আপনার চাহিদামত সবকিছুই পাবেন সিলেট এর জিন্দাবাজার এলাকার পানসী, পাঁচ ভাই কিংবা পালকি রেস্টুরেন্টের সুলভ মূল্যে পছন্দমত দেশী খাবার খেতে পারেন, এছাড়াও এই রেস্টুরেন্ট গুলোতে অনেক রকম ভর্তা ভাজি পাওয়া যায় বলে সবার কাছে খুব জনপ্রিয়

বিছনাকান্দি ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

খরচ কমাতে দলগত ভাবে ভ্রমণ করুন। চাইলে একদিনেই রাতারগুল দেখে বিছনাকান্দি ভ্রমণ করতে পারেবেননৌকা ও সিএনজি ভাড়া করতে ভালো মত দামাদামি করুন।  বিছনাকান্দিতে পানিতে নামার সময় সতর্ক থাকুন

বর্ষাকালে অল্প পানির স্রোতের গতিও অনেক বেশি থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখবেন।  কিছু জায়গায় পাথর উত্তোলনের ফলে নিছে গভীর খাঁদ আছে, কোথাও নামার আগে পরামর্শ নিন

বিছানাকান্দি একটি পাথর কোয়ারী, চারাপাশে পাথর, পানির নিচেও পাথর, তাই হাঁটা চলায় অতিরিক্ত সাবধান থাকুন। দয়া করে পরিবেশ ও প্রকৃতির ক্ষতি হয় এমন কিছু করবেন না। স্থানীয়দের সাথে বিনয়ী থাকুন।  সন্ধ্যার আগেই সিলেট শহরে ফিরে আসুন

 

৩। জাফলং

জাফলং (Jaflong) প্রকৃতির কন্যা হিসাবে পরিচিত সিলেট জেলার দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে জাফলং সবার পছন্দ সিলেট এর গোয়াইনঘাট উপজেলার ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষা প্রকৃতির দানে রুপের পসরা সাজিয়ে আছে জাফলং

 

সিলেট থেকে জাফলং এর দুরত্ব মাত্র ৬২ কিলোমিটার পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ পানির ধারা, ঝুলন্ত ডাউকি ব্রিজ, উঁচু উঁচু পাহাড়ে সাদা মেঘের খেলা জাফলংকে করেছে অনন্য একেক ঋতুতে জাফলং একেক রকম রুপের প্রকাশ ঘটায় যা পর্যটকদেরকে ভ্রমণের জন্য সারাবছরই আগ্রহী করে রাখে

কিভাবে যাবেন

জাফলং যেতে আপনাকে আসতে হবে চায়ের দেশ সিলেটে দেশের নানা প্রান্ত থেকে সিলেট আসা যায় কয়েকভাবেই বাস, ট্রেন কিংবা আকাশপথে যে কোন উপায়েই সিলেট আসতে পারবেন চলুন জেনে নিন বিস্তারিত

ঢাকা থেকে সিলেট

ঢাকা থেকে সিলেটগামী যে কোন বাসে চলে আসতে পারেন সিলেট ঢাকার ফকিরাপুল, গাবতলী, সায়েদাবাদ, মহাখালি ও আবদুল্লাপুর বাস টার্মিনাল থেকে সিলেটের বাস ছেড়ে যায়৷ গ্রীন লাইন, সৌদিয়া, এস আলম, শ্যামলি ও এনা পরিবহনের এসি বাস যাতায়াত করে, এগুলোর ভাড়া সাধারণত ৮০০ থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে

এছাড়াও ঢাকা থেকে সিলেট যেতে শ্যামলী, হানিফ, ইউনিক, এনা পরিবহনের নন এসি বাস জনপ্রতি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা ভাড়ায় পাবেন সকাল, দপুর কিংবা রাত সব সময়ই বাস ছেড়ে যায় ঢাকা থেকে সিলেট এর দূরত্ব ২৪০কিলোমিটার, সিলেট পৌঁছাতে সাধারণত লাগে ৬ ঘন্টার মত

ঢাকা থেকে ট্রেনে করে সিলেট যেতে কমলাপুর কিংবা বিমান বন্দর রেলওয়ে স্টেশান হতে উপবন, জয়ন্তিকা, পারাবত অথবা কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনকে বেছে নিতে পারেন আপনার ভ্রমণ সঙ্গী হিসাবে শ্রেণী ভেদে জনপ্রতি ট্রেনে যেতে ভাড়া ২৮০ থেকে ১২০০ টাকা ট্রেনে সিলেট যেতে সময় লাগে ৭-৮ ঘন্টা

 

ঢাকা থেকে সবচেয়ে দ্রুত সময়ে ও সাচ্ছন্দে যেতে আকাশ পথকে বেছে নিতে পারেন শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ, রিজেন্ট এয়ার, ইউনাইটেড এয়ার, নভো এয়ার এবং ইউএস বাংলা এয়ারের বিমান প্রতিদিন সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়

সিলেট থেকে জাফলং

সিলেটে থেকে প্রায় সকল প্রকার যানবাহনেই জাফলং যাওয়া যায় লোকাল বাসে যেতে আপনাকে শহরের শিবগঞ্জ অথবা কদমতলী বাস স্ট্যান্ডে যেতে হবে সেখান থেকে জনপ্রতি ভাড়া লাগে ৮০ টাকা সিএনজি বা অটোরিকশায় ১২০০ থেকে ২০০০ টাকায় জাফলং যেতে পারবেন

মাইক্রোবাস যাওয়া-আসার জন্য রিজার্ভ নিলে সারাদিনের জন্যে ভাড়া লাগবে ৩০০০ থেকে ৫০০০ টাকা সিলেট নগরীর যেকোন অটোরিকশা বা সিএনজি স্ট্যান্ড থেকেই জাফলং যেতে পারবেন দলগত ভাবে গেলে মাইক্রোবাস রিজার্ভ করে গেলেই ভালো, তাহলে আশেপাশের অন্যান্য যায়গা নেমে ঘুরে দেখতে পারবেন ঠিক করার আগে ভাল মত দরদাম ও কি কি দেখতে চান তা ভালো করে কথা বলে নিবেন

কোথায় থাকবেন

জাফলং এ গেস্ট হাউজ ও রেস্ট হাউজ, জেলা পরিষদের বাংলো ছাড়া থাকার ভালো কোন ব্যবস্থা নেই থাকতে হলে আগে থেকেই বুকিং দিয়ে রাখতে হবে তাই সাধারণত পর্যটকরা সিলেটেই ফিরে আসেন

লালা বাজার এলাকায় ও দরগা রোডে কম ভাড়ায় অনেক মানসম্মত রেস্ট হাউস আছে৷ যেখানে ৪০০ থেকে ২৫০০ টাকায় বিভিন্ন ধরণের রুম পাবেন এছাড়াও হোটেল হিল টাউন, গুলশান, দরগা গেইট, সুরমা,কায়কোবাদ ইত্যাদি হোটেলে আপনার প্রয়োজন ও সামর্থ অনুযায়ী থাকতে পারবেন

 

কি খাবেন

সিলেটর জিন্দাবাজার এলাকার পানসী, পাঁচ ভাই কিংবা পালকি রেস্টুরেন্টের সুলভ মূল্যে পছন্দমত দেশী খাবার খেতে পারেন, এছাড়াও এই রেস্টুরেন্ট গুলোতে প্রায় ৩০ রকম ভর্তা পাওয়া যায়

 

জাফলং ভ্রমণ টিপস

গ্রুপ করে গেলে ভাল খরচ কম হবে। কিছু কিনতে বা খেতে চাইলে দরদাম করে নিন। ভারতীয় সীমান্ত কাছেই, তাই সীমানার ব্যপারে সতর্ক থাকুক। গাড়ি ঠিক করার সময় দরদাম করুন

জাফলং এর পানিতে নামার সময় সতর্ক থাকুন, পাথর উত্তোলনের ফলে অনেক যায়গা অনেক গভীর

(চলবে)

পাঠকের মন্তব্য