পরিবেশ সংরক্ষণে কাজ করছে ইন্দোনেশিয়ার মসজিদ

মসজিদ, মন্দির বা গির্জা কি পরিবেশ দূষণের সমস্যার প্রতি উদাসীন থাকতে পারে? বহু মানুষের সমাগমও তো দূষণের কারণ৷ ইন্দোনেশিয়ার এক মসজিদ পরিবেশ সংরক্ষণে এক বহুমুখী উদ্যোগ শুরু করেছে৷

   
ওজু করার সময় অনেক পানির প্রয়োজন হয়৷ নামাজের আগে নিজেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার এই প্রক্রিয়া ইসলাম ধর্মে আবশ্যিক৷ নামাজিরা দিনে পাঁচ বার নামাজের আগে প্রতিবার ওজু করেন৷ মসজিদের টেকনিকাল দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বায়ু বলেন, ‘‘আমরা মসজিদের ছাদ থেকে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করি৷ পিভিসি পাইপের মাধ্যমে সেই পানি নীচে থেকে ছাদের ট্যাংকগুলিতে পাঠানো হয়৷ এক একটি ট্যাংকে ৪,১০০ লিটার করে পানি জমা করা সম্ভব৷ আমাদের ১০টি এমন ট্যাংক রয়েছে৷ খুব বেশি বৃষ্টি হলে পানি উপচে পড়ে আবার পাইপের মাধ্যমে নীচে মাটির উপর অথবা কূয়ায় চলে যায়৷ ওজুর পানি পুনর্ব্যবহার করতে ওজুর জায়গা থেকে সেই পানি জলাধারে জমা হয়৷ একটি পাইপ মাটির নীচে পরিশোধন যন্ত্রে পানি সরবরাহ করে৷''

এই প্রণালীর মাধ্যমে পানি সংরক্ষণ ও পরিশোধন করা সম্ভব৷ বৈদ্যুতিক নির্গমনও কমে যায়৷ ইকো মসজিদ উদ্যোক্তা হায়ু প্রাবোভো মনে করিয়ে দেন, ‘‘মসজিদে দুটি বিষয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ – পানি ও নিকাশি ব্যবস্থা৷ পানি সংরক্ষণ, পানি বাঁচানো ও পানি রক্ষা করা – এই তিনটি কর্মসূচি রয়েছে৷ পানি বাঁচিয়ে গাছ পোঁতা, বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করা, মাটিতে গর্ত খুঁড়ে পানি জমা করা, গ্রামে পুকুর খোঁড়া এবং পরিবেশবান্ধব নিকাশি ব্যবস্থা করাও জরুরি৷ বৃষ্টি হলে তার পানি অপচয় না করে ধরে রাখা হয়৷ কুয়া রাখাও জরুরি কারণ মসজিদগুলিতে ওজুর পানির অনেক অপচয় ঘটে৷ সেই পানি যথেষ্ট পরিষ্কার থাকে, তাই কূয়ায় জমা রাখা যায়৷ দ্বিতীয়ত, পানি বাঁচানোও জরুরি৷ তৃতীয়ত পানি রক্ষা করা প্রয়োজন৷ মজুত পানি দূষিত করা উচিত নয়৷ মসজিদ যেন পানিতে সাধারণ বা তরল আবর্জনা ফেলতে না পারে, সে দিকে নজর দিতে হবে৷ কারণ ইসলাম ধর্মে এটি নিষিদ্ধ৷ পানি দূষণ করা পাপ৷ অর্থাৎ এই তিনটি কর্মসূচি সব বিষয়ের সুরাহা করছে৷ ইন্দোনেশিয়ার গ্রিন বিল্ডিং পরিষদের মানদণ্ড অনুযায়ী এই আজ-জিকরা মসজিদের কাজের মূল্যায়ন করা হয়েছে৷ অর্থাৎ আমরা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড কাজে লাগিয়ে পাঁচটি মসজিদ বিচার করেছি৷ আজ-জিকরা সেগুলির মধ্যে একটি৷ ভবন ও ব্যবস্থাপনার বিচারে এটিই সবচেয়ে পরিবেশবান্ধব মসজিদ৷''

জামাতও ইকো মসজিদের সুবিধাগুলি টের পাচ্ছে৷ মানুষের মতে, এর ফলে মানুষের জীবনযাত্রার উপকার হচ্ছে৷ জামাতের অংশগ্রহণকারী সাহায়দি মনে করেন, ‘‘ইকো মসজিদ কর্মসূচির ফলে পানির গতি কমে গেলেও আমার ওজুর কোনো ক্ষতি হচ্ছে না৷ অবশিষ্ট পানি অন্য কাজে লাগতে পারে৷''

আর এক অংশগ্রহণকারী স্যামসুদ্দিন সেইসঙ্গে মনে করিয়ে দেন, ‘‘এখন আমরা পানি সাশ্রয় করছি, যাতে পানির অপচয় না হয়৷ ইসলাম ধর্মে পানির অপচয়ের অনুমতি নেই৷''

আশা করা হচ্ছে, মুসলিম সমাজ এবার পরিবেশের ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারবে৷ ইকো মসজিদ উদ্যোক্তা হায়ু প্রাবোভো বলেন, ‘‘আজকাল মানুষ মসজিদ ভবন আরও উন্নত ও সুন্দর করার জন্য দান করে থাকে৷ অথচ মসজিদ ও আবাসিক মাদ্রাসার সঙ্গে অনেক সমস্যা জড়িয়ে রয়েছে৷ আবর্জনা, পানি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানীর ব্যবস্থাপনা নেই বললেই চলে৷ মসজিদ ও আবাসিক মাদ্রাসায় আবর্জনা ও পানির ব্যবস্থাপনা করা উচিত৷ এমন দানখয়রাত শুধু লোক দেখানো হওয়া উচিত নয়৷''

আমাদের গ্রহের সংরক্ষণের উদ্যোগ শুনতে বড় মনে হলেও সামান্য পদক্ষেপ দিয়ে কাজ শুরু করা যেতে পারে৷

এশিয়মেইল২৪/এসইউ

পাঠকের মন্তব্য