আফগানিস্তানে ভারত-পাকিস্তানের কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব

ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা আফগানিস্তানে অবস্থিত ভারতীয় কূটনীতিক স্থাপনায় হামলার আশঙ্কা করছে। তারা জানিয়েছে কিভাবে হামলা চালানো হবে তার পরিকল্পনা চলছে।


ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা আরো দাবি করেছে, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই লস্করে তৈয়বার মতো উগ্র গোষ্ঠীগুলোর সহায়তায় আফগানিস্তানে অবস্থিত ভারতীয় কূটনৈতিক স্থাপনায় হামলা চালাতে পারে। এদিকে, নয়াদিল্লীর এসব বক্তব্যের ব্যাপারে ইসলামাবাদ এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। কিন্তু এর আগে পাকিস্তান বহুবার অভিযোগ করেছে, ভারত ও আফগানিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালানোর জন্য সেদেশে তৎপর সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে উস্কানি দিচ্ছে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আফগানিস্তানকে কেন্দ্র করে পরমাণু শক্তিধর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার দ্বন্দ্ব নতুন কিছু নয়। কিন্তু সাম্প্রতিক মাসগুলোতে নয়াদিল্লি কয়েক দফা ভারতীয় কূটনৈতিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালানোর পরিকল্পনার জন্য পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করেছে। ভারতের কর্মকর্তারা মনে করেন, কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেয়ার পর সেখানকার উত্তেজনাকর পরিস্থিতির কারণে পাকিস্তানও এক ধরনের প্রক্সি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। কাশ্মীর নিয়ে ভারতের ওই পদক্ষেপের পর পাকিস্তান অভিযোগ করেছে ভারত সরকার আফগানিস্তানের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে ষড়যন্ত্র পাকাচ্ছে।

অনেক পর্যবেক্ষকের মতে, নয়াদিল্লি-ইসলামাবাদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব আফগানিস্তান পর্যন্ত গড়িয়েছে এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এমন এক অচলাবস্থার সম্মুখীন হয়েছে যে, বিরাজমান বিভিন্ন মতপার্থক্য নিরসনের সুযোগ হাতছাড়া হচ্ছে। আফগানিস্তান বিষয়ক বিশেষজ্ঞ রহিম হামিদি 'আমাদের আফগানিস্তান' নামে একটি ওয়েব সাইটে এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে লিখেছেন, "বাস্তবতা হচ্ছে, ভারত-পাকিস্তান দুই দেশই পরমাণু শক্তিধর হওয়াতে সরাসরি সশস্ত্র যুদ্ধের কথা কেউ বলছে না। বলা যায় পরমাণু অস্ত্র যুদ্ধকে ঠেকিয়ে দিয়েছে আর এ কারণেই দুই দেশ এখন আফগানিস্তানে প্রক্সি-যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পড়েছে।"

আফগানিস্তানে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলাকালেও ভারত ও পাকিস্তান মুখোমুখি অবস্থানে ছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতেও আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রয়েছে এবং দেশটির বৃহৎ অর্থনৈতিক প্রকল্পে ভারত গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার দ্বন্দ্ব আফগানিস্তানের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং দেশটির সরকার ও জনগণও বিষয়টিকে ভাল চোখে দেখছে না। কিন্তু তারপরও আফগান সরকার তার দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পরমাণু শক্তিধর ওই দুই দেশের তৎপরতা রোধে এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আফগানিস্তান বহুকাল ধরে বিদেশি দখলদার শক্তির খেলার কেন্দ্র হয়ে আছে। কিন্তু ওই দেশটিতে  আজ পর্যন্ত দখলদার শক্তির কোনো লক্ষ্যই অর্জিত হয়নি। এ অবস্থায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার দ্বন্দ্ব আফগানিস্তানের কোনো সমস্যার সমাধান করবে না বলে অনেকে মনে করছেন।

এশীয়ামেইল২৪/এসইউ

পাঠকের মন্তব্য