বাম হাতে পানি পান করা বনাম পানি পানে রাসূল সাঃ এর নির্দেশনা

পানির অপর নাম জীবন। বেঁচে থাকার অত্যাবশ্যকীয় একটি উপাদান এটি। তবে পানি পানেও রয়েছে ইসলামের নির্দেশনা।রাসূল সাঃ পানি পানের বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন।বাম হাতে পানি পান করতে নিষেধ করেছেন,ডান হাতে পান করার জন্য বলা হয়েছে।
কোন কারণ ছাড়া বাম হাতে পানি পান করা মাকরূহ। একাধিক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাম হাতে পানাহার করতে নিষেধ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে,

لا تأكلوا بالشمال، فإن الشيطان يأكل بالشمال

“তোমরা বাম হাতে খেয়ো না, নিশ্চয়ই শয়তান বাম হাতে খায়।” -মুসলিম, হাদীস নং: ৩৭৬৩

এমনিভাবে ডান হাতে পানাহারের নির্দেশ করে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,

إذا أكل أحدكم فليأكل بيمينه، وإذا شرب فليشرب بيمينه، فإن الشيطان يأكل بشماله، ويشرب بشماله

“তোমাদের কেউ যখন খাবে সে যেন ডান হাতে খায় এবং যখন পান করবে সে যেন ডান হাতে পান করে। নিশ্চয়ই শয়তান বাম হাতে খায়, বাম হাতে পান করে। -সহীহ মুসলিম, হাদিস নং: ৩৭৪৬

বাম হাতে খাবার গ্রহণকারী জনৈক ব্যক্তিকে নবীজি তিরস্কার করেছেন এবং একে অহংকার হিসেবে ব্যক্ত করেছেন। হাদিস শরীফে এসেছে,

عن سلمة بن الأكوع رضي الله عنه أن رجلاً أكل عند النبي صلى الله عليه وسلم  بشماله، فقال: كل بيمينك» » ، قال: لا أستطيع، قال: «لا استطعت»، ما منعه إلا الكبر، قال: فما رفعها إلى فيه.

আয়েশা ضى الله عنها থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:

مَنْ أَكَلَ بِشِمَالِهِ أَكَلَ مَعَهُ الشَّيْطَانُ، وَمَنْ شَرِبَ بِشِمَالِهِ شَرِبَ مَعَهُ الشَّيْطَانُ

-যে তার বাম‎‎ হাতে খায়, শয়তান তার সাথে খায়। আর যে তার বাম‎‎ হাতে পান করে, শয়তান তার সাথে পান করে। আহমদ হা/২৩৯১৯]

রাসূলুল্লাহ ﷺ এর স্ত্রী হাফসা ضى الله عنها থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:

أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَجْعَلُ يَمِينَهُ لِطَعَامِهِ وَشَرَابِهِ وَثِيَابِهِ، وَيَجْعَلُ شِمَالَهُ لِمَا سِوَى ذَلِكَ

-“নবী ﷺ খানা, পান করা ও পরিধানের জন্য তার ডান হাত ব্যবহার করতেন, এ ছাড়া অন্যান্য কাজের জন্য তিনি তার বাম‎‎ হাত ব্যবহার করতেন”।[আবু দাউদ হা/৩০]
“হযরত সালামা ইবনুল আকওয়া (রা.) থেকে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি রাসূল (সা.)-এর সামনে বাম হাতে খাচ্ছিল। রাসূল (সা.) বললেন, তুমি ডান হাতে খাও। সে বলল আমি পারব না। রাসূল (সা.) বললেন: আর কখনো পারবেও না। একমাত্র অহংকারই তাকে ডান হাত দিয়ে খাওয়া থেকে বিরত রাখল। বর্ণনাকারী বলেন: এরপর সে আর কখনো মুখের কাছে হাত উঠাতে পারেনি।” –সহিহ মুসলিম, হাদিস নং: ৩৭৬৬

তবে ফুকাহায়ে কেরাম ও মুহাদ্দিসগণ বলেন, প্রয়োজন হলে, অথবা ডান হাত ব্যবহারে অক্ষম হলে বাম হাতেও পানাহার করা যাবে। -শরহে মুসলিম, ইমাম নববী ২/১৭২; ফাতহুল বারী ৯/৪৩৩; আততামহীদ, ইবনে আবদুল বার ১১/১১১
পানি পানের সময় স্বয়ং বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুনির্দিষ্ট কিছু আমল করতেন।

>> পানি পানের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলা-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন তোমরা পানি পান করতে যাবে তখন প্রথমেই ‘বিসমিল্লাহ’ পড়বে।’ (তিরমিজি)

শুধু পানি পানের সময়ই নয়, বরং যে কোনো কিছু খাওয়ার সময় এবং ভালো যে কোনো কাজের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলতে হবে।


>> সবসময় ডান হাতে পানি পান করা-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কখনো খাবার এবং পানীয় বাম হাতে গ্রহণ করবে না। কেননা শয়তান বাম হাতে খাবার গ্রহণ করে।’ (মুসলিম)

সব ভালো কাজে ‘বিসমিল্লাহ’ বলার মতো ভালো কাজে ডান হাত ব্যবহার করাও উত্তম। এমনকি পোশাক পরার সময়ও আগে ডান দিক থেকে শুরু করা। আর ডান দিক থেকে শুরু করতে হলে ডান হাতই ব্যবহার করতে হয়।

>> সবসময় বসে পানি পান করা-
হাদিসের বিখ্যাত গ্রন্থ মুসলিমে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, (আগে) বসুন এবং পানি করুন।’

স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের মতেও এটি সর্বজন বিদিত যে, দাঁড়িয়ে পানি পান করার চেয়ে বসে পানি পান করা বেশি ভালো। আ বসে পানি পান করা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অন্যতম সুন্নাত।

>> ৩ নিঃশ্বাসে পানি পান করা-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা কখনো এক নিঃশ্বাসে পানি পান করোনা। বরং তোমরা দুই কিংবা তিন নিঃশ্বাসে পানি পান করো।

অনেককেই দেখা যায়, পানি পান করার সময় ইচ্ছায়, অনিচ্ছায় এক নিঃশ্বাসে মগ কিংবা গ্লাসে পুরো পানি পান করে থাকে। আবার অনেকে পানিও পান করতে থাকে আর নিঃশ্বাস ফেলতে থাকে। এর কোনোটিই ঠিক নয় বরং সুন্নাত বিরোধী কাজ। তাই পানি পানের সময় অল্প অল্প করে ২/৩ বারে পানি পান করা। স্বাস্থ্য বিজ্ঞানেও এটি উপকারী।

>> গ্লাসের পানিতে নিঃশ্বাস না ছাড়া
তিবরানিতে এসেছে, ‘পানি পান কিংবা খাবার গ্রহণের সময় মুখ থেকে পানি কিংবা খাবারে নিঃশ্বাস না ছাড়া।’

চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিষয়টি সুস্পষ্ট করা হয়েছে যে, অনেক সময় মুখে অনেক বা মুখের সামনে অনেক ব্যাকটেরিয়া বা জীবানু থাকে। পানি বা খাবারে ফুঁ দেয়া বা নিঃশ্বাস ফেলানোর ফলে এ জীবানু ব্যাকটেরিয়া পানি ও খাবারের সঙ্গে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। আর তাতে ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

>> সবসময় পানি পানের পর ‘আলহামদুলিল্লাহ’ পড়া
পানি পানের পর আল্লাহর শুকরিয়া আদায় স্বরূপ সবসময় ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলা। সুন্দর ও নিরাপদভাবে খাবার ও পানীয় গ্রহণের পর আল্লাহর প্রশংসামূলক বাক্য ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলায় তারই কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা হয়।

মাওলানা মোঃ মুজিবুর রহমান

পাঠকের মন্তব্য